Remove of excess body fat-মেদ ভুঁড়ি’র ঘরোয়া সমাধান

 মেদ ভুঁড়ি’র ঘরোয়া সমাধান


মেদ ভুড়ি একটি বিব্রতকর বিষয়। উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার ই যে শুধু পেটের মেদ বাড়ার কারণ তা নয়, উচ্চ ক্যালরিযুক্ত যেকোনো খাবারও পেটের মেদ বাড়াতে পারে।

তাই আমাদের সবার জানা দরকার কোন ধরনের খাবারের কারণে পেটে ধীরে ধীরে মেদ জমতে থাকে। অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার, নিয়মিত লাল মাংস খাওয়া, কোমল পানীয়, মিষ্টিজাতীয় খাবার অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া, অস্বাস্থ্যকর বাইরের খাবার যেমন- ভাজা- পোড়া ইত্যাদি খাওয়া,  মদ্যপান করা, স্যাচুরেটেড চর্বি গ্রহণ ইত্যাদি পেটের মেদ বাড়িয়ে তোলার পেছনে যথেষ্ঠ ভূমিকা রাখে।

ওয়ের্ক ফোর্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা গবেষণায় দেখেন যে, যখন একই তেল বারবার ব্যবহার করা হয়, তখন সেখানে ট্রান্সফ্যাট উৎপন্ন হয়। আর এই ট্রান্সফ্যাট পেটের মেদ বাড়িয়ে দেয়। পেটের মেদ অতিরিক্ত জমে যাওয়ার আগেই সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত, অন্যথায় সেটি নিয়ে পরতে হয় ভিষণ যন্ত্রণায়। 

নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও সঠিক জীবন যাপনের মাধ্যমে আমরা আমাদের শরীরের বাড়তি মেদ বৃদ্ধি হওয়া থেকে রক্ষা পেতে পারি। 



আসুন জেনে নেই পেটের মেদ বা ভুঁড়ি থেকে বাঁচতে হলে কি করণীয় ঃ

  • আপনার দৈনন্দিন খাবার তালিকায় ফাইবারসমৃদ্ধ (আঁশযুক্ত খাবার)  অন্তর্ভুক্ত করুন। যেমন,শাকসবজি ও ফলমূল জাতীয় খাবার। এসব খাবারে মিলবে আঁশ। সেই সাথে লাল চাল বা লাল আটার তৈরি খাবার। আখরোট, কাঠবাদাম ও সামুদ্রিক মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎস। তাই এসব খাবার পেটের মেদ কমাতে কার্যকরী ভ’মিকা পালন করে। তাই এসব খাবার নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। 
  • মসলার ঝাল যুক্ত খাবার খান, পেটের মেদ কমে যাবে। এসব ঝাল আসবে দারুচিনি, আদা, গোলমরিচ এবং কাঁচামরিচ থেকে। খাদ্য তালিকায় বা তরকারিতে দারুচিনি, আদা, গোলমরিচ ব্যবহার করুন। এই সব মসলা স্বাস্থ্যকর ও পেটের মেদ কমাতে কার্যকর।
  • কোনভাবেই ফাস্টফুড খাবেন না। মেয়োনেজ, পনির, সস, তেল, মাখন এসব আপনার পেটে চর্বি জমতে সবচেয়ে বেশী সাহায্য করে। 
  • যাদের চা পানের অভ্যাস আছে - গ্রিন-টিতে আছে অ্যান্টি– অক্সিডেন্ট, যা পেটের মেদ কমাতে খুব বেশি কার্যকর। তাই দুধ ও চিনি বেশি দিয়ে চা পানের অভ্যাস বদলে ফেলুন । আর গ্রিন-টিতে অভ্যস্ত হতে শিখুন।
  • কাঁচা রসুনের কয়েক ২টি কোয়া প্রতিদিন সকালে চিবিয় খান। এই অভ্যাসের ফলে দ্রæত আপনার ওজন কমবে আর পেটের মেদ ঝরবে। কাঁচা রসুন শরীরের রক্তপ্রবাহ সহজ করে। পেটে মেদ জমতে দেয় না মোটেও। 
  • আর প্রতিটা সকাল শুরু করুন এক গøাস কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান এর মাধ্যমে। এতে শরীরের হজমপ্রক্রিয়া ভালো থাকে, শরীরের যাবতীয় টক্সিন এতে বেরিয়ে যায় এবং শরীরে মেদ জমার সম্ভাবনা কমে যাবে। এটা ফলো করার জন্য সত্যিই আলাদা কোনও এফর্ট দিতে হবে না আপনাকে। অথচ ভুঁড়িও কমবে।
  • অনেকেই খাবার খাওয়ার পর বসে বা শুয়ে পরেন। আর এজন্য তাদের খাবার সঠিকভাবে হজম হয় না, ফলে পেটে চর্বি জমতে থাকে। তাই খাবার খাওয়ার পর ১৫ থেকে ২০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করা উচিত।
  • যারা সারা দিন চেয়ারে বসে কাজ করেন, তাঁদের পেটে সহজে মেদ জমে যায়। তাঁদের উচিত ২৫-৩০ মিনিট বসে কাজ করার পর উঠে ১০-১২ মিনিট হাঁটাহাঁটি করা।
  • একবারে অতিরিক্ত খাবারনা না গ্রহণ করে একটু একটু করে বারবার খাবার গ্রহণ করুন। সারা দিনের খাবারকে ৪-৫ বারে গ্রহণ করুন। তাতে তিনবার প্রধান খাবার ও দুই-তিনবার নাশতাজাতীয় খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন।
  • পেটের মেদ কমাতে চাইলে সবার আগে খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিন চিনি। চিনিতে থাকে এমন কিছু উপাদান যা ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।  
  • পেটের মেদ কমাতে চাইলে মদ্যপান বন্ধ করুন। মদ পানের জন্য বাড়ে পেটের মেদ। অ্যালকোহলে এমন কিছু উপাদান আছে যা ওজন বৃদ্ধি করে। 
  • নিয়মিত ঘুমানোর অভ্যাস করুন। দিন-রাত ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুম একজন মানুষের জন্য জরুরী। গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত ঘুম না হলে হজম হয় না। এর থেকে বৃদ্ধি পায় ফ্যাট। ফলে ডায়েটিং এর সময় পর্যাপ্ত ঘুমানো সবার আগে দরকার। তা না হলে বাড়তে পারে নানা সমস্যা। 

এছাড়াও বাড়িতে বসেই আরো কিছু ঘরোয়া টিপস অনুসরণ করে মেদ ভুঁড়ি কমানো সম্ভব। তা হলো -

  • ধনেপাতার রসও দ্রæত ফ্যাট কমায়। ধনেপাতার রস প্রতিদিন সকালে হালকা গরম পানিতে লেবুর রসের সঙ্গে মিশিয়ে খেলেও উপকার পাবেন।
  • হালকা গরম পানিতে আদা কুচি ফেলে খেতে পারেন দিনের যে কোনও সময়, তাতেই উপকার পাবেন। আদা ফ্যাট কমায় প্রাকৃতিক ভাবে।
  •  গোটা কয়েক জিরে সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে সেই পানি ছেঁকে একটা পরিস্কার বোতলে রেখে দিন। বার তিনেক অল্প অল্প করে ওই পানি খান। এতে ভাল ফল পাবেন।
  •  রাতে ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে খাবার খাওয়া উচিৎ। তারপর শুতে যাওয়ার আগে হালকা পায়চারি করুন। এতে আপনার খাবার হজম হবে। খাবার হজম না হওয়ার কারণে মেদ জমে শরীরে। ফলে হজম হওয়ার সময় দিলে ভুঁড়ি এমনিতেই কমবে।

তাছাড়া যদি নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারেন, তার থেকে ভাল আর কোনও দাওয়াই নেই। সেটা করতে না পারলে দিনের যেকোন সময় হালকা পায়ে হাঁটার চেষ্টা করুন। 

  • অফিস-আদালত বা বাসায় যতটা সম্ভব লিফটের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করতে শিখুন। এটা পেটে জমে থাকা চর্বি অপসারণের খুব ভাল একটা পদ্ধতি। সিঁড়িতে হাটার ফলে পেটের উপর চাপ পরে ও ধীরে ধীওে চর্বি কমতে থাকে।
  • চেষ্টা করুন সব সময় সোজা হয়ে দাঁড়াতে, বসতে ও হাঁটতে। দীর্ঘ সময় কুজো হয়ে এক স্থানে বসে থাকার কারণে ভুঁড়ি বেড়ে যায়। 
  • কোমল পানীয় বর্জন করুন, তার বদলে প্রচুর পানি, বাসায় বানানো ফলের জুস, ফ্রুট সালাদ হতে পারে খুব ভালো বিকল্প।


আর সবথেকে বড় কথা আনন্দে থাকুন, খোশ মেজাজে থাকুন সর্বদা।



Comments