Sore inside the mouth-মুখের ঘা
মুখের ঘা/ Sore inside the mouth
মুখগহ্বরের ভেতরে ঘা- যেমন ঠোঁট বা গালের ভেতরের দেয়ালের নরম মাংস পেশীতে, জিহ্বার উপরে বা নিচে, মাড়ির গোড়ায়, নরম তালুতে কিংবা অন্য যেকোনও স্থানের নরম কলাতে অবস্থিত কিছু ক্ষুদ্রাকার, অগভীর দুষ্টক্ষত। এর বৈজ্ঞানিক নাম অ্যাফথাস স্টোমাটাইটিস (Aphthous stomatitis) যার আক্ষরিক অর্থ হল "দুষ্টক্ষতজনিত মুখগহ্বরের প্রদাহ"।
মুখের এসব স্থানে ঘা হলে বেশ যন্ত্রণা হয় এবং এগুলির কারণে কথা বলতে ও কোনও কিছু খেতে ও অসুবিধা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মুখগহ্বরের ঘা এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে নিজে থেকেই চলে যায়, কোন কোন এক দুই মাসও স্থায়ী হয়। আবার এই ছোট ঘা বড় ঘা-এর রূপও নেয়। তাই দ্রæত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মুখের ঘায়ের লক্ষণ -
ছোট্ট একটি গোলাকার অংশ সাদাটে হয়ে ওঠা।
সেই সাদা অংশকে ঘিরে লাল রঙের সীমানা থাকে।
কোন কোন ক্ষেত্রে সাদা অংশতে পুঁজ হতে দেখা যায়।
আর মুখের এই ঘা বেশিরভাগ ই ডিম্বাকৃতির হয়ে থাকে।
ভিতরে পুঁজ হলে জ¦ালা-পোড়া করে।
কারণ -
ঠিক কি কারণে মুখের ভিতরে এরকম ঘা হয়, তা এখনও সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে গবেষকরা ধারনা করেন বেশ কিছু কারণে এমটি হতে পারে।
যেমন-খুব দ্রæত দাঁত ব্রাশ করতে গিয়ে মুখে আঘাত পেলে।
দাঁতের চিকিৎসার সময় হালকা আঘাত পেলে।
দুর্ঘটনাবশত মুখের ভেতরে গালের মাংস পেশীতে দাঁতের কামড় বসলে।
কোনও কোনও খাদ্যে অতিসংবেদনশীলতা থাকলে, খাদ্যে বি-১২ ভিটামিন, দস্তা বা জিঙ্ক, ফোলিক অ্যাসিড বা লোহার অভাব ঘটলে।
মুখের ভেতরে কিছু ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির কারণে।
পাকস্থলির ক্ষত সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া হেলিকোব্যাক্টর পিলোরি’র কারণে।
এছাড়া কিছু রোগের উপসর্গ হিসেবেও মুখগহ্বরের ঘা প্রকাশ পেতে পারে, যেমন অনিয়ন্ত্রিত ডাযাবেটিস থাকলে। আবার মাদকদ্রব্য, অ্যালকোহল গ্রহণকারীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার জন্য এই ঘা হতে পারে। রক্তে আয়রন ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের অভাব। অতিরিক্ত পান, সুপারি, জর্দা থেকে মুখের ভেতরে চামড়া উঠে, মাড়ি বা মুখের নরম মাংসপেশি ক্ষয় হয়েও এই সমস্যা হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা থেকেও হতে পারে।
প্রতিরোধের উপায় -
মুখের ঘা প্রতিরোধ করার জন্য অতিরিক্ত নোনতা, ঝালযুক্ত বা অ¤øযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।
চা- কফি পান না করা।
যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাদের অ্যালার্জি হতে পারে এমন খাবার পরিহার করতে হবে।
মুখগহ্বর সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে।
নরম দাঁতের ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে। ,
সোডিয়াম লরিল সালফেটযুক্ত টুথপেস্ট পরিহার করা।
মানসিক চাপ নেওয়া যাবে না।
পান, সুপারি, জর্দা, গুল, তামাক পাতা, মাদক, অ্যালকোহল বর্জন করতে হবে।
ঔষধ হিসেবে আয়রন ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ট্যাবলেট খেতে হবে।
পানিশূন্যতা এবং অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও দাঁতের ক্যারিজ জাতীয় অসুখ থাকলে খুব তাড়াতাড়ি তার সমাধান জরুরি।
মাউথওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে হবে। অথবা হালকা গরম পানিতে লবণ দিয়ে কুলি করা দরকার।
আরো কিছু ঘরোয়া টিপস মুখের ঘা সারানোর জন্য ভাল কার্যকরী, তা হলো –
যষ্টিমধুর ব্যবহার- মুখের ঘা সারাতে যষ্টিমধু বেশ কার্যকর। এক টেবিল চামচ যষ্টিমধু দুই কাপ পানিতে দুই থেকে তিন ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। এটি দিয়ে দিনে কয়েকবার কুলকুচি করুন।
টি-ব্যাগ এর ব্যবহার- একটি টি-ব্যাগ ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে সেটি ঘায়ের স্থানে লাগান। সঙ্গে সঙ্গে আপনার আক্রান্ত স্থানের ব্যথা কমে যাবে।
নারিকেল তেল এর ব্যবহার- একটু তুলার সঙ্গে নারকেল তেল লাগিয়ে অথবা পরিস্কার আঙ্গুলে তেল লাগিয়ে মুখের ঘায়ের স্থানে লাগান। নারিকেল তেলের অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান ঘা সারিয়ে তুলতে সাহায্য করবে।
তুলসি পাতা’র ব্যবহার- কয়েকটি তুলসি পাতাসহ দিনে তিন থেকে চারবার পানি পান করুন। এটি দ্রæত আপনার মুখের ঘা প্রতিরোধ করবে।
বেকিং সোডা’র ব্যবহার- এক চা চামচ বেকিং সোডা অল্প পানিতে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। এই পাতলা পেস্টটি মুখের ঘায়ের স্থানে লাগিয়ে নিন। এটি দিনে কয়েকবার করুন।
এছাড়ও মধু তুলার সঙ্গে লাগিয়ে নিন এবং মুখের ঘায়ের স্থানে লাগান। ব্যথার কষ্ট কমে আসবে।
Comments
Post a Comment